দখিনের খবর ডেস্ক ॥ সৌরজগতের লোহিত গ্রহ মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের ৯৫ শতাংশই কার্বন ডাই-অক্সাইড। তারওপর এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব অনেক কম। সব মিলিয়ে রুক্ষ-শীতল গ্রহটি মানুষের বসবাসের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। তবে সেই বৈরী পরিবেশকে অনুকূল করার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তারা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে কিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে তা শ্বাসযোগ্য বিশুদ্ধ অক্সিজেনে পরিণত করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নাসা গত বুধবার জানায়, ছয় চাকার মঙ্গলযান পারসেভারেন্সে একটি যন্ত্রাংশের পরীক্ষার সময় গত মঙ্গলবার এই সাফল্য অর্জন করে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। এ সময় সৌরজগতের লোহিত গ্রহ মঙ্গলের কম ঘনত্বের বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে তা সফলভাবে অক্সিজেনে রূপান্তরিত করেছে ওই যন্ত্রাংশ। পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণের সাত মাস পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের বুকে অবতরণ করে পারসেভারেন্স। মঙ্গলের বুকে সর্বশেষ এই সাফল্য অর্জনের একদিন আগেই আরেকটি বড় সাফল্য অর্জন করে নাসা। আর তা হলো ভীনগ্রহে প্রথমবারের মতো মানুষের তৈরি হেলিকপ্টার ওড়ানো। পারসেভারেন্সের বুকে থাকা হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি গত সোমবার প্রথমবারের মতো মঙ্গলের আকাশে ডানা মেলে। পারসেভারেন্সের যে যন্ত্রাংশটি কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তরিত করেছে, তার নাম মক্সি (এমওএক্সআইই)। মার্স অক্সিজেন ইন-সিটু রিসার্চ ইউটিলাইজেশন এক্সপেরিমেন্টের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো এমওএক্সআইই বা মক্সি। নাসা জানিয়েছে, যন্ত্রাংশটি ৫ গ্রামের মতো অক্সিজেন তৈরি করেছে মঙ্গলবার। এই পরিমাণ একজন মহাকাশচারীর প্রায় ১০ মিনিটের শ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সমপরিমাণ। নাসা জানিয়েছে, মক্সি প্রথম পরীক্ষায় সাফল্য দেখালেও তাতে সন্তুষ্ট নন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আগামী দুই বছরে আরও অন্তত নয়বার যন্ত্রটির পরীক্ষা চালাবেন। তাও বিভিন্ন জায়গায়, গতিতে ও পরিস্থিতিতে করা হবে এই পরীক্ষা। নাসার স্পেস টেকনোলজি মিশন ডিরেক্টরেটের টেকনোলজি ডেমোনস্ট্রেশনের পরিচালক ট্রুডি কর্টেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মক্সি কিন্তু প্রথম যন্ত্র নয়, যা অন্য পৃথিবীতে অক্সিজেন তৈরি করল। তবে ধরনের দিক থেকে যন্ত্রটি অনন্য, যা ভবিষ্যতে ভীনগ্রহে বসবাসে সহায়ক হবে।’ নাসা জানায়, মক্সি উচ্চ তাপে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ভেঙে অক্সিজেনে পরিণত করে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলের ৯৫ শতাংশই কার্বন ডাই-অক্সাইড। বাকি ৫ শতাংশ নাইট্রোজেন ও আর্গন। এর মধ্যে আর্গন হলো নিষ্ক্রিয় গ্যাস। মঙ্গলে অক্সিজেনও আছে, তবে তা উপেক্ষণীয় মাত্রায় কম। তবে মঙ্গলে এই নগণ্য মাত্রার অক্সিজেনকেও অনেকখানি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, মঙ্গলে মানুষের অভিযানে অক্সিজেনের কোনো বিকল্প নেই। প্রথমত, শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন; দ্বিতীয়ত, মহাকাশযানের জ্বালানি হিসেবেও এই গ্যাস প্রয়োজন। নাসার তথ্যমতে, মঙ্গলে চারজন নভোচারী পাঠাতে হলে মহাকাশযানে ১৫ হাজার পাউন্ডের জ্বালানি প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে প্রয়োজন হবে ৫৫ হাজার পাউন্ড অক্সিজেন। এই বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন পৃথিবী থেকে বয়ে নেওয়ার চেয়ে মঙ্গলেই তা উৎপাদন সহজতর বলে মনে করে নাসা। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলের ৯৫ শতাংশই কার্বন ডাই-অক্সাইড। বাকি ৫ শতাংশ নাইট্রোজেন ও আর্গন। এর মধ্যে আর্গন হলো নিষ্ক্রিয় গ্যাস। মঙ্গলে অক্সিজেনও আছে, তবে তা উপেক্ষণীয় মাত্রায় কম। নাসার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মক্সির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মাইকেল হেখট বলেন, মহাকাশচারীদের মঙ্গলে গিয়ে বসবাস ও কাজের ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য কমপক্ষে এক মেট্রিক টন অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে। মক্সি প্রতি এক ঘণ্টায় ১০ গ্রাম করে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। কাজেই যন্ত্রটি এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হবে। নাসা জানিয়েছে, মক্সি প্রথম পরীক্ষায় সাফল্য দেখালেও তাতে সন্তুষ্ট নন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আগামী দুই বছরে আরও অন্তত নয়বার যন্ত্রটির পরীক্ষা চালাবেন। তাও বিভিন্ন জায়গায়, গতিতে ও পরিস্থিতিতে করা হবে এই পরীক্ষা।
Leave a Reply